মূল বিষয়ে যান
  1. উপন্যাস/
  2. বাদশাহী আংটি (১৯৬৬)/

বাদশাহী আংটি (১৯৬৬) - ১২

12 #

আংটিটা যে এবার ফেরত চাই

আপনার আংটি?

বনবিহারীবাবুর কথাটা যে ফেলুদাকে বেশ অবাক করেছে সেটা বুঝতে পারলাম।

বনবিহারীবাবু ঠোঁটের কোণে পাইপ আর একটা অল্প হাসি নিয়ে চুপ করে বসে রইলেন। বাইরে বিবির শব্দ কমে এসেছে। ফেলুদা বলল—

আর সে আংটি যে আমার কাছে রয়েছে তা আপনি কী করে জানলেন?

বনবিহারীবাবু এবার কথা বললেন।

অনুমান অনেক দিন থেকেই করছিলাম। বাইরের একটা লোক এসে ধীরুবাবুর শোবার ঘরের আলমারি খুলে তার থেকে আংটি বার করে নিয়ে যাবে, এটা প্রথম থেকেই কেমন যেন অবিশ্বাস্য লাগছিল। তবে তোমার ওপর সন্দেহ গেলেও, এতদিন প্রমাণ পাইনি। এখন পেয়েছি।

কী প্রমাণ?

বনবিহারীবাবু উত্তরে কিছু না বলে মেঝে থেকে টেপ রেকর্ডারটা কোলে তুলে নিয়ে ঢাকনা খুলে সুইচ টিপে দিলেন। যা শুনলাম তাতে আমার রক্ত জল হয়ে গেল। চাকা ঘুরছে, আর যন্ত্রটা থেকে আমার আর ফেলুদার গলার স্বর বেরোচ্ছে—

ওটা আংটিই ছিল—তাই না?

তুই যখন জেনেই ফেলেছিস, তখন আর তোর কাছে লুকোনোর কোনও মানে হয় না। আংটিটা আমার কাছেই রয়েছে—সেই প্রথম দিন থেকেই।—

বনবিহারীবাবু খট করে রেকর্ডারের সুইচ বন্ধ করে দিলেন। তারপর বললেন, কাল রাত্রে তোমরা শোবার আগেই মাইক্রোফোনটা তোমাদের খাটিয়ার তলায় রেখে এসেছিলাম। অবিশ্যি তোমরা যে ঠিক এই বিষয়েই কথাবাত বলবে সেটা আমার জানা ছিল না, কিন্তু যখন বলেইছ, তখন কি আর এ সুযোগ ছাড়া যায়? এর চেয়ে বেশি প্রমাণ কি দরকার আছে তোমার–অ্যাঁ, ফেলুবাবু?

কিন্তু আংটিটা আপনার, সে কথা আপনি বলছেন কী করে?

বনবিহারীবাবু রেকর্ডারটা টেবিলের উপর রেখে দিয়ে পায়ের উপর পা তুলে চেয়ারে হেলান দিয়ে বললেন, ১৯৪৮ সালে, অৰ্থাৎ আজ থেকে আঠারো বছর আগে, কলকাতার নৌলাখা কোম্পানি থেকে দুলাখ টাকা দিয়ে আমি ও আংটিটা কিনি। পিয়ারিলালের সঙ্গে আমার আলাপ হয় তার কিছু পরেই। তাঁর যে এ সব জিনিসের শখ ছিল সেটা তিনি আমাকে বলেননি, কিন্তু আংটিটা আমি তাঁকে দেখিয়েছিলাম। দেখে তাঁর চোখ-মুখের অবস্থা যা হয়েছিল, তাতেই আমার মনে একটা সন্দেহ জাগে। তার দুদিন পরেই আংটিটা আমার বাড়ি থেকে লোপ পেয়ে যায়। পুলিশে খবর দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু চোর ধরা পড়েনি। তারপর লখ্‌নৌ এসে কবছর থাকার পর এই সেদিন শ্রীবাস্তবের কাছে আংটিটা দেখে জানতে পারি পিয়ারিলাল সেটা তাঁকে দিয়েছেন। পিয়ারিলাল ভাবেননি তিনি প্রথম অ্যাটাকটা থেকে বেঁচে উঠবেন। তাই মানে মানে চোরাই মাল অন্যের হাতে চালান করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন। আমি তাঁর আরোগ্যের সুযোগ নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। ভাবলাম, তিনি যদি ব্যাপারটা স্বীকার করেন, তা হলে শ্রীবাস্তবকে বললে তিনি নিশ্চয়ই আমাকে আংটিটা দিয়ে দেবেন। শ্রীবাস্তবকে তার দরুন কিছু টাকাও দিতে রাজি ছিলাম আমি। কিন্তু আশ্চর্য কী জানো? পিয়ারিলাল চুরির ব্যাপারটা বেমালুম অস্বীকার করে গেলেন। বললেন, আমার কাছে ওরকম আংটি উনি কোনওদিন দেখেননি। অথচ সে আংটির রসিদ পর্যন্ত এখনও আমার কাছে।

এবার ফেলুদা কথা বলল, আর তার গলার স্বরে ভয়ের কোনও চিহ্নমাত্র নেই।

কিন্তু বনবিহারীবাবু, আমি এবার আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই—আশা করি আপনি তার জবাব দেবেন।

বনবিহারীবাবু বললেন, আগে বলে সে-আংটি এখনও তোমার কাছেই রয়েছে, না তুমি সেটা অন্য কোথাও রেখে এসেছ। নিজের জিনিস আমি নিজের হাতেই ফেরত নিতে চাই।

এবার ফেলুদার গলার বিদ্রুপের ইঙ্গিত—

কিন্তু এত দিন তো অন্য লোক লাগিয়ে আংটি চুরির চেষ্টার ব্যাপারে, এবং আমার পিছনে লাগার ব্যাপারে আপনার উৎসাহের কোনও অভাব দেখিনি। আপনার ওই গণেশ গুহ লোকটি—যিনি আজ দাড়ি-পাগড়ি পরে পাঞ্জাবি ড্রাইভার সেজেছেন, তিনিই তো বোধ হয় সেই নকল সন্ন্যাসী, তাই না? শ্রীবাস্তবের বাড়ির ডাকাতও তো বোধ হয় তিনিই, আর প্রথম দিন শ্রীবাস্তবকে ধাওয়া করার ভরও তো তার উপরেই ছিল। অবিশ্যি পরে শ্রীবাস্তবকে ছেড়ে আমার পিছনে লাগানো হয় তাকে রেসিডেন্সিতে গুলতি মারা, ক্লোরোফর্ম দিয়ে আমাকে অজ্ঞান করার চেষ্টা, হুমকি-কাগজ ছুড়ে মারা—এ সবই তো তার কাজ, তাই না?

বনবিহারীবাবু একটু হেসে বললেন, সব কাজ তো আর নিজে করা যায় না ফেলুরাম। এমন কিছু কিছু কাজ সব সময়েই থাকে যার ভার অন্যের উপর দিতে হয়। আর বুঝতেই তে পারো—গণেশের স্বাস্থ্যটা তো ভাল, কারণ সে এককালে সাকাসে বাঘ সিংহ হ্যান্ডল করেছে—সুতরাং ডানপিটেমোর কাজগুলো সে ভালই করে। আর এটা আমি অবশ্যই বলব যে, আমার হুকুমে এ সব কাজগুলো করে সে যে-অপরাধ করেছে, তোমার অপরাধ তার চেয়ে অনেক বেশি। কারণ তুমি যে আংটি তোমার কাছে ধরে রেখেছ, তাতে তোমার কোনও অধিকার নেই। ওটা আমার জিনিস, আমার প্রপার্টি। এবং সেটা আমার ফেরত চাই-আজই, এখনই।

শেষ কথাগুলো বনবিহারীবাবু বললেন প্রায় চিৎকার করে। মনে সাহস আনার অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও আমার হাত-পা কীরকম যেন ঠাণ্ডা হয়ে আসছিল।

ফেলুদার উত্তরটা এল ইস্পাতের মতো কঠিন স্বরে—

খুনের দায়ে অভিযুক্ত হলে পর ও-আংটি কি আপনার কোনও কাজে আসবে?

বনবিহারীবাবু প্রায় কাঁপতে কাঁপতে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।

তুমি তো কম বেয়াদব নও হে ছোকরা। যাকে তাকে ফস করে খুনি বলে দিচ্ছ।

যাকে তাকে বলতে যাব কেন। আমার বিশ্বাস খুনিকেই খুনি বলছি। আপনি পিয়ারিলালের স্পাই-এর ব্যাপারটা একটু খুলে বলবেন কি? পরশু আপনার কথা শুনে মনে হয়েছিল আপনার ও সম্বন্ধে কিছু জানা আছে।

বনবিহারীবাবু একটা শুকনো হাসি হেসে বললেন, ভেরি সিম্পল। খুলে বলার কিছু নেই। আমি আংটিটা সম্পর্কে খোঁজ-খবর করার জন্য ওঁর পেছনে কিছু লোক লাগিয়েছিলাম। পিয়ারিলাল নিশ্চয়ই তাদের সম্পর্কে কিছু বলতে চেয়েছিলেন।

আমি যদি বলি পিয়ারিলালের স্পাই-এর সঙ্গে গুপ্তচরের কোনও সম্পর্ক নেই?

তার মানে? কী বলতে চাইছ তুমি?

আপনি পিয়ারিলালের দ্বিতীয় অ্যাটাকের দিন সকালে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন, তাই না?

তাতে কী হয়েছে? আমি গেলেই তাঁর অ্যাটাক হবে? তাঁর বাড়িতে তো আগেও গিয়েছি আমি।

তখন তো খালি হাতে গেছেন।

খালি হাতে মানে?

কিন্তু এই শেষবার আপনি খালি হাতে যাননি। আপনার সঙ্গে একটা বাক্স ছিল, আর সেই বাক্সের মধ্যে ছিল আপনার চিড়িয়াখানার একটা অধিবাসী—আপনার বিশাল, বিষাক্ত আফ্রিকান মাকড়সা—ব্ল্যাক্ উইডো স্পাইডার, তাই না? পিয়ারিলাল বলতে চেয়েছিলেন স্পিাইডার, কিন্তু পুরো কথাটা সেই অবস্থায় উচ্চারণ করা সম্ভব হয়নি, তাই স্পাইডার হয়ে গিয়েছিল স্পাই।

বনবিহারীবাবুর মুখ হঠাৎ জানি কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেল তিনি আবার চেয়ারে বসে পড়লেন। বললেন, কিন্তু…তাঁকে আমি মাকড়সা দেখিয়ে করবটা কী?

ফেলুদা বলল, পিয়ারিলালের আরশুলা দেখে হৃৎকম্প হয় সেটা বোধহয় আপনার জানা ছিল না। আপনি হয়তো মাকড়সাটা দেখিয়ে ভয় পাইয়ে আংটিটা আদায় করে নিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু হয়ে গেল একেবারে হার্ট অ্যাটাক, এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যু! এ মৃত্যুর জন্য আপনি ছাড়া আর কে দায়ী বলুন? আর আপনি বলছেন আংটি আপনি কিনেছিলেন এবং পিয়ারিলাল সেটা চুরি করেন। আমি যদি বলি, আংটি পিয়ারিলাল কিনে কলকাতায় আঠারো বছর আগে আপনাকে দেখিয়েছিলেন। আর সেই থেকে আপনার ও আংটির উপর লোভ—আর আপনার বাড়ির ওই তালা-দেওয়া বন্ধ ঘরে এরকম আরও অনেক পুরনো জিনিস আপনার আছে, আর ওই সব মূল্যবান জিনিস চোর ডাকাতের হাত থেকে সামলানোর জন্যেই আপনার ওই চিড়িয়াখানা?

বনবিহারীবাবু গম্ভীর গলায় বললেন, তুমি আর কী বিশ্বাস করো সেটা শুনতে পারি কি?

ফেলুদা গম্ভীর গলায় বলল, নিশ্চয় পারেন। আমার বিশ্বাস পিয়ারিলালের ওই বাদশাহী আংটি আপনি আর কোনওদিন চোখেও দেখতে পাবেন না, আর আমার বিশ্বাস আপনার ভবিষ্যতে রয়েছে আপনার অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি।

গণেশ?

বনবিহারীবাবুর গুরুগম্ভীর চিৎকারে কাঠের ঘরটা গমগম করে উঠল।

ফেলুদা হঠাৎ বলল, মুখে রুমাল চাপা দে!

কেন এ কথা বলল জানি না—কিন্তু আমি তৎক্ষণাৎ পকেট থেকে ফেলুদার দেওয়া রুমালটা বার করে মুখের উপর চাপা দিলাম।

গণেশ গুহ ঘরের ভিতর এসে ঢুকল—হাতে সেই কাঠের বাক্স।

বনবিহারীবাবু দেখি টেপ রেকর্ডারটা নিয়ে দরজার দিকে পিছিয়ে যাচ্ছেন।

ফেলুদা নিজের পকেট থেকে রুমাল বার করল, আর তার সঙ্গে সেই মাজনের কৌটোটা—যাতে লেখা দশংসংস্কারচর্ণ।

গণেশ গুহ বাক্সটা মাটিতে রেখে ঢাকনাটা খুলে যেই পিছিয়ে যাবে, সেই মুহুর্তে ফেলুদা কোটোটার ঢাকনা খুলে তার ভিতর থেকে এক খাবলা কী জানি গুড়ো তুলে নিয়ে গণেশ আর বনবিহারীবাবুর দিকে ছুড়ে দিয়ে নিজের মুখে রুমাল চাপা দিল।

আমার রুমালের ফাঁক দিয়ে সামান্য যে গন্ধ এল তাতে বুঝলাম সেটা গোলমরিচ। সেই গোলমরিচের গুড়ো দুজনের চোখে নাকে ঢুকে ওদের যে কী অবস্থা হল তা বলে বোঝাতে পারব না। প্রথমে যন্ত্রণায় তাদের মুখ একেবারে বেঁকে গেল, তারপরে একসঙ্গে সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে একেবারে সোজা মাটিতে গিয়ে পড়লেন। গণেশ গুহরও প্রায় একই অবস্থা। তবু সে যাবার সময় কোনওরকমে দরজাটা টেনে বন্ধ করে আমাদের বন্দি করে দিয়ে গেল।

এবার মেঝেতে খোলা বাক্সটার দিকে চেয়ে দেখি তার ভিতর থেকে একটা সাপের মাথা বেরিয়েছে, আর সেই সঙ্গে আরম্ভ হয়েছে সেই হাড়কাপানো শব্দ–-

কির্‌র্‌র্‌ কিট্‌ কিট্‌ কিট্‌… কির্‌র্‌র্‌ কিট্‌ কিট্‌ কিট্‌… কির্‌র্‌র্‌ কিট্‌ কিট্‌ কিট্‌…

আমি বুঝতে পারলাম আমার মাথার ভিতরটা কেমন জানি করছে, বুঝতে পারলাম ফেলুদা আমাকে ধরে বেঞ্চির উপর দাঁড় করিয়ে দিল, আর বুঝলাম যে ফেলুদা নিজেও বেঞ্চির উপর উঠে দাঁড়িয়েছে।

খুব বেশি ভয় পেলে একটা অদ্ভুত ব্যাপার হয় সেটা এখন বুঝতে পারলাম। যার থেকে ভয়, তার দিকেই যেন চোখটা চলে যায়। কিংবা হয়তো সাপ জিনিসটার সত্যি করেই একটা হিপনোটাইজ করার ক্ষমতা আছে। মাথা ঝিম্ ঝিম্ অবস্থাতেই স্পষ্ট দেখলাম র‍্যাট্‌ল স্নেকটা বাক্স থেকে বেরিয়ে ঝুমঝুমির শব্দ করতে করতে এদিক ওদিক দেখে আমাদের দিকে চোখটা ফেরাল, আমাদের দিকে চেয়ে রইল, তারপর কাঠের মেঝের উপর দিয়ে দিয়ে একেবেঁকে আমাদেরই বেঞ্চির দিকে প্রায় যেন আমাকে লক্ষ্য করেই এগোতে লাগল।

বুঝলাম আমার চোখের দৃষ্টি ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসছে। সাপটা যখন বেঞ্চি থেকে তিন হাত দূরে, তখন হঠাৎ মনে হল যেন একটা বাজ পড়ল, আর সেটা যেন আমাদের ঘরেরই ভেতর। একটা চোখ ঝলসানো আলো, একটা কানফাটা আওয়াজ, আর তার পরেই বারুদের গন্ধ।

আর সাপ?

সাপের মাথা দেখলাম থেতলে শরীর থেকে আলগা হয়ে পড়ে আছে। ঝুমঝুমিটা দু-একবার নড়ে থেমে গেল।

তারপর আর কিছু মনে নেই।

 

যখন জ্ঞান হল, তখন দেখি আমি শালবনের মধ্যেই একটা শতরঞ্চির উপর শুয়ে আছি। কপাল আর মাথাটা ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগছে—বুঝলাম জল দেওয়া হয়েছে। শ্রীবাস্তবের মুখটা প্রথম চোখে পড়ল—আর তার পরেই বাবা।

কেমন আছেন তপেশবাবু—

গলাটা শুনে চমকে উঠে পাশ ফিরে দেখি—মহাবীর। কিন্তু গায়ে গেরুয়া পোশাক কেন?

মহাবীর বলল, ট্রেনে বেরিলি পর্যন্ত একসঙ্গে এলাম, আর চিনতে পারলে না?

দারুণ মেক-আপ করে তো লোকটা! দাড়িওয়ালা অবস্থায় সত্যিই চিনতে পারিনি। আর তা ছাড়া গলার আওয়াজ আর কথা বলার ঢংও বদলে ফেলেছিল।

মহাবীর বলল, আমার রিভলবারের টিপ দেখলে তো? আসলে যেদিন ভুলভুলাইয়ায় দেখা হল, আর উনি বললেন আমাকে চেনেন না—সেদিন থেকেই বনবিহারীবাবুর উপর আমার সন্দেহ হয়েছিল। কারণ কলকাতায় উনি আমাদের বাড়ি অনেকবার এসেছেন, আমার সঙ্গে কথাও বলেছেন। একদিন বাবার সঙ্গে খুব কথা কাটাকাটি হয়েছিল—ওই আংটিটা নিয়েই। সেটাও আমার কিছুদিন আগেই মনে পড়েছে।

বাবা বললেন, তোদের দেরি দেখে লছমনঝুলা থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে শেষটায় টায়ারের দাগ দেখে বনের রাস্তাটা ধরে ভিতরে ঢুকেছি। মহাবীরবাবুই অবিশ্যি গাড়ি ঘোরানোর কথা প্রথম বলেন।

আর ওরা দুজন কোথায় গেলেন?

গোলমরিচের ঝাঁজে খুব শাস্তি পেয়েছে। ফেলুর ব্রহ্মাস্ত্রের তুলনা নেই। ওরা এখন পুলিশের জিন্মায় আছে।

পুলিশ কেথেকে এল?

সঙ্গেই তো ছিল। বিলাসবাবু তো আসলে ইনস্পেক্টর গরগরি?

কী আশ্চর্য। ওই হাত-দেখিয়ে ভদ্রলোকই ইনস্পেক্টর গরগরি। এমন অদ্ভুত ভাবে যে আংটির ঘটনাটা শেষ হবে তা ভাবতেই পারিনি।

কিন্তু ফেলুদা? ফেলুদা কোথায়?

ওর কথা মনে পড়তেই আমার চোখে একটা ঝিলিক-মারা আলো এসে পড়ল। যেদিক থেকে আসছে সেদিকে তাকিয়ে দেখি ফেলুদা আঙুলে আংটিটা পরে কিছুদূরে একটা খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে, গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে এসে পড়া সূর্যের আলোটা আংটির হিরের উপর ফেলে সেটা রিফ্লেক্ট করে আমার চোখে ফেলছে।

আমি মনে বললাম—এই আংটি রহস্য সমাধানের ব্যাপারে কেউ যদি সত্যি করে বাদশা হয়ে থাকে, তবে সে ফেলুদাই।